তথ্য-প্রযুক্তি

নৈতিকতার ধার ধারে না এআই

40views

ভুয়া ছবি সৃষ্টি করতে এতকাল অনেক সময়, অর্থ ও দক্ষতার প্রয়োজন হতো৷ আর এখন এআই নিমেষের মধ্যে আপত্তিকর ছবি সৃষ্টির ক্ষমতা রাখে৷ এই প্রযুক্তির বিকাশে বাধা সৃষ্টি না করে নৈতিকতার বেড়া লাগানো বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে৷

বিনামূল্যের এক এআই সফ্টওয়্যার মানুষের শরীরের বিবর্তনের এক হিসেব সৃষ্টি করেছে৷ একাধিক মডেলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ পেয়ে সেই সফটওয়্যার চোখ বা নাকের বর্ণনা দিতে পারে৷ এ ভাবে মানুষের শরীরের গঠন স্পষ্ট হয়ে যায়৷

ব্যবহারকারীর পছন্দ অনুযায়ী সফটওয়্যারে সৃষ্টি করা ছবি বা ভিডিও ক্লিপের রূপ দেওয়া সম্ভব৷ আসলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কোনো সীমা নেই৷ গণিতজ্ঞ ও এআই বিশেষজ্ঞ হিসেবে ক্রিস্টিয়ান বেনেফেল্ড মনে করেন, ‘কোনো এআই-এর অবশ্যই নৈতিকতাবোধ থাকে না৷ ঠিক সে কারণেই যে কোনো জিনিস একে অপরের সঙ্গে একত্রিত করা যায়৷’

ফলে এআই ব্যবহার করে যৌন উদ্দিপক ও যৌনতাপূর্ণ ছবি সৃষ্টি করা সম্ভব৷ ট্রেনিং মডিউলগুলোর ওপর চোখ বোলালেই এমন ছবির চাহিদা টের পাওয়া যায়৷ চ্যাট-জিপিটি-র উদ্ভাবক ওপেন এআই-এর মতো পরিষেবা সংস্থা ছবি সৃষ্টির ক্ষেত্রে ক্লাউড ব্যবহার করে৷

এর অর্থ, ছবি সৃষ্টির লক্ষ্যে কম্পিউটেশনের কাজ কোনো নিয়ন্ত্রিত সার্ভারে ঘটে৷ সিস্টেম বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে আপত্তিকর ছবি সৃষ্টির অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে৷ কিন্তু বিনামূল্যের এআই সফ্টওয়্যার ব্যক্তিগত কম্পিউটারে চলে৷ সেখানে কন্টেন্ট সৃষ্টির ক্ষেত্রে কোনো বাধানিষেধ নেই৷

অর্থাৎ ক্লাউড সলিউশন কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে৷ জার্মান এথিক্স কাউন্সিলের সদস্য ইয়ুডিট সিমোন বলেন, ‘অবশ্যই নির্দিষ্ট কিছু প্রমপ্ট ও নির্দিষ্ট কিছু এনকোয়্যারি আগে থেকেই নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব৷ যেমন চ্যাট জিপিটির টেক্সটের ক্ষেত্রে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, এমন সব প্রশ্নের জবাব দিতে পারবো না অথবা এটা খুব বিতর্কিত বিষয়৷ ছবি সৃষ্টির ক্ষেত্রেও এমন কিছু বিষয়ের কথা ভাবা যেতে পারে৷ তবে এমন বাধা সৃষ্টি করে নীতিগতভাবে অপব্যবহার বন্ধ করা যাবে বলে আমি মনে করি না৷ এমন প্রচেষ্টা হয়তো কম রাখা যাবে, কিন্তু তা সত্ত্বেও নতুন প্রমপ্ট বা এনকোয়্যারির ভাষায় রদবদলের মাধ্যমে বিতর্কিত কনটেন্ট ঠিকই সৃষ্টি করা যাবে৷’

ট্রেনিং মডেলগুলোর মধ্যে প্রকৃত মানুষের মডেলের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে৷ যেমন ক্রিস্টিয়ান বালে নামের এক অভিনেতা৷ তার মডেলও ডাউনলোড করে নিজের ইচ্ছেমতো তাতে রদবদল করা যায়৷ এআই-এর মাধ্যমে সৃষ্টি করা ছবি দেখতে প্রায় খাঁটি লাগে৷ আইনের চোখে বিষয়টি এখনো পুরোপুরি স্পষ্ট নয়৷

প্রো. আলেনা বুয়িক্স জানান, ‘বর্তমানেই বেশ কিছু আইন চালু আছে, যেমন ‘অকুপেশনল সেফটি’, যা প্রাসঙ্গিক৷ অথবা বর্ণবাদ এড়াতে সাহায্য করে, এমন আইন এখনই প্রয়োগ করা সম্ভব৷ তথ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত মৌলিক বিধিও তাই৷ তবে বিকাশের এমন দ্রুত গতির পেছনে ধাওয়া করা বিশাল চ্যালেঞ্জ৷’

প্রযুক্তিগত বিধিনিষেধ চাপানোর সময় আগেই পেরিয়ে গেছে৷ ইমেজ জেনারেটরগুলো মুক্ত ওপেন সোর্সের ভিত্তির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে৷ ফলে সেগুলোর বিকাশের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই৷ সেই টুলের যে কোনো ধরনের ব্যবহারও সম্ভব৷ এমন বিকাশ গ্রহণযোগ্য সামাজিক গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সম্ভব নয়৷ হস্তক্ষেপের সুযোগও সীমিত৷

এর ফলে ইন্টারনেট প্রকৃত ব্যক্তির ভুয়া ছবিতে ভরে যাচ্ছে৷ যেমন ব্যাটেল ট্যাংকের সামনে শান্তির দূত হিসেবে পায়রা নিয়ে ভ্লাদিমির পুটিন৷ ক্রিস্টিয়ানে বেনেফেল্ডের সিস্টেম এমন ছবি সৃষ্টি করতে ৩০ সেকেন্ডও সময় নেয় না৷ গণিতজ্ঞ ও এআই বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিয়ান বেনেফেল্ড বলেন, ‘আজকাল মানুষের পক্ষে এআই জেনারেটেড ছবির সঙ্গে খাঁটি ছবির পার্থক্য বোঝা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে৷ এআই ছবির মান অত্যন্ত ভালো৷ আমরা এমন এক যুগে প্রবেশ করছি, যেখানে খুব ভালো করে সবকিছু খতিয়ে দেখতে হবে৷ এআই জেনারেটেড ছবি চেনার লক্ষ্যে ওয়াটারমার্ক বাধ্যতামূলক হোক, সেটাই আমি চাই৷ সে ক্ষেত্রে যে কোনো মানুষ বুঝতে পারবেন, যে ছবিটি স্বাভাবিক উৎস থেকে আসেনি৷’

নতুন এই এআই প্রযুক্তি ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে অনেক ভালো কাজ করতে পারে৷ এর নান্দনিক দিকও রয়েছে৷ যেমন ফ্রান্সের এক শিল্পী এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ফ্যাশন জগতের একশো বছরের টাইম ট্রাভেল সৃষ্টি করেছেন৷

এক এআই সফ্টওয়্যারের কল্যাণে সেটা সম্ভব হয়েছে৷

Leave a Reply