অটোয়া ও নয়াদিল্লির মধ্যে সাম্প্রতিক কূটনৈতিক বিরোধের পরিধি যেন বেড়েই চলছে। এরই মধ্যে কানাডা অভিযোগ করলো, শিখ অ্যাক্টিভিস্টদের লক্ষ্য করে সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনের প্রচারণার পেছনে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাত রয়েছে।
কানাডার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড মরিসন স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) রাতে জাতীয় সুরক্ষা কমিটির সদস্যদের নিশ্চিত করেছেন, তাদের সরকার অমিত শাহকে কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানের স্থপতি হিসাবে বিবেচনা করে। ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসাবে বিবেচিত তিনি।
ভারত এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কানাডার অভিযোগের প্রতিক্রিয়া না জানালেও বুধবার (৩০ অক্টোবর) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লির সরকারি কর্মকর্তারা এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ডেভিড মরিসন জাতীয় সুরক্ষা কমিটির সদস্যদের আরও বলেছেন, তিনি ওয়াশিংটন পোস্টকে অমিত শাহের নাম নিশ্চিত করার তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, `সাংবাদিক আমাকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করলেন, এটি সেই ব্যক্তি কি না। আমি নিশ্চিত হয়েছি, এটি সেই ব্যক্তি।` তবে কানাডার অভিযোগের পেছনের প্রমাণ তিনি প্রকাশ করেননি।
প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এর আগে বলেছিলেন, কানাডার কাছে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে যে, ২০২৩ সালের জুনে ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় কানাডিয়ান শিখ কর্মী হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারত সরকারের এজেন্টরা জড়িত ছিল।
এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে পরবর্তী সময়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক বাদানুবাদ সৃষ্টি হয়। কানাডা ভারতীয় কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে। ভারতও কানাডিয়ান কর্মকর্তাদের বহিষ্কারের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানায়।
ট্রুডোর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নাথালি ড্রোইন গতকাল মঙ্গলবার নিরাপত্তা কমিটিকে বলেন, ভারত সরকার কূটনৈতিক চ্যানেল ও প্রক্সির মাধ্যমে কানাডায় বসবাসরত ভারতীয় নাগরিক ও কানাডার নাগরিকদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে বলে কানাডার কাছে প্রমাণ রয়েছে।
কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ অতীতে বলেছে, তারা ভারতের সাথে অভিযোগেও প্রমাণও শেয়ার করেছে।। তবে নয়াদিল্লির কর্মকর্তারা বারবার তা অস্বীকার করেছেন। অভিযোগগুলো অযৌক্তিক বলে অভিহিত করেছেন।
এদিকে, অমিত শাহের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে ভারত তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, নয়াদিল্লি মনে করে কানাডার প্রমাণ `খুবই দুর্বল`। এটি ক্ষমতাধর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য কোনো সমস্যার সৃষ্টি করবে বলে তারা মনে করে না।
মোদি সরকার খালিস্তানপন্থীদের `সন্ত্রাসী` আখ্যা দিয়ে দেশটির নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেছে। আন্দোলনকারীরা মূলত `খালিস্তান` নামে একটি স্বাধীন আবাসভূমি ভারত থেকে আলাদা করার দাবি জানায়।
১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে `সশস্ত্র বিদ্রোহে` হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। বিশেষ করে ১৯৮৪ সালে শিখ খালিস্তানপন্থীদের তাড়াতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর `উদ্যোগের কারণে` তার শিখ দেহরক্ষী তাকে হত্যা করেন। এরপর শিখ বিরোধী দাঙ্গায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়। -তথ্যসূত্র: আলজাজিরা