অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আস্থা রাখতে চায় বিএনপি। বিএনপি বিশ্বাস করে, এই সরকারের ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। দলে আশা, সরকার যত দ্রুত সম্ভব একটি নির্বাচনের আয়োজন করবে।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ বুধবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর–রুনি মিলনায়তনে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করছি। কারণ আগে সভা-সমাবেশ করতে যে ভীতির মধ্যে থাকা লাগত, এখন আর সেটা হয় না। আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী দল। আওয়ামী লীগের ভেতরে গভীরভাবে ডুব দেওয়া জিনিস রয়েছে: একটি হলো সন্ত্রাস, আরেকটি জঙ্গি। ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে খালি হাতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিজয় অর্জন করা যায় না। কিন্তু ছাত্ররা ও জনতা প্রমাণ করেছে, সঠিকভাবে জনতাকে সম্পৃক্ত করা গেলে সেটা সম্ভব।’
আওয়ামী লীগ বারবার গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা, যে স্বপ্ন দেখেছিলাম ১৯৭১ সালে। কিন্তু তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করে নাই। সেই সময় তারা হত্যা, লুণ্ঠন, দুর্নীতি করে দেশটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই সময় বাকশালের পরিবর্তন হয়েছে রক্তাক্ত পরিবেশের মধ্য দিয়ে।’
বর্তমান সরকার দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করবে আশা প্রকাশ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমরাই তৈরি করেছি। অন্য কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমরা আশা করি, অতি অল্প সময় বা যৌক্তিক সময়ের মধ্য নির্বাচন দিয়ে দেবেন। এটা আমাদের প্রত্যাশা ও জনগণ এটাই চায়।’
তিনি বলেন, ‘আমি লক্ষ করছি আমাদের নেতাদের অস্থিরতা। সুন্দর একটা নির্বাচন দেবেন, জনগণ খুশি হবে। আমরা বিশ্বাস করি, তাঁরা সময়টার সদ্ব্যবহার করবেন। নজরটা ওইদিকে দেবেন। নির্বাচনের কোনো বিকল্প নাই। আমাদের রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে হলে সবার অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলনে এতগুলো প্রাণ গেছে, দীর্ঘকাল সংগ্রাম করেছে।’
নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য একটি সার্চ কমিটি করেছে। আমাদের আশা ছিল, সার্চ কমিটি গঠনের আগে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। কিন্তু তারা সেটা করেনি। এ জন্য আমরা এটাকে বড় ধরনের কোনো সমস্যা মনে করছি না। আমরা চাই দ্রুত নির্বাচন কমিশন হোক, দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করুক। তিন মাসের মধ্য আউয়ালরা ও হুদারা নির্বাচন আয়োজন করতে পারলে আপনারা কেন পারবেন না?’
সরকারের প্রতি আস্থা রাখার কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, এই সরকারের ভিন্ন কোনো রকমের রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। কারণ এই সরকারের যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি সারা বিশ্বে সমাদৃত। তিনি কমিট (অঙ্গীকার) করেছেন, আমার কোনো রাজনৈতিক ইচ্ছা নেই। আপনারা যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই দায়িত্ব পালন করতে চাই। আমরা বলব, ড. ইউনূসকে বাংলাদেশের মানুষ খুব ভালোবাসে, আপনাকে সম্মান দেবে এবং আগামীতেও দেবে। একটাই অনুরোধ করব, আপনার জায়গাটা কোনোভাবে যেন নষ্ট না হয় সেদিকে সজাগ থাকবেন।’
বিভিন্ন সংস্কারের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যুদ্ধ কখনো শেষ হয় না, রাজনৈতিক সংগ্রাম কখনো শেষ হয় না। এই সংগ্রাম চলতে থাকে। সংস্কার কার্যক্রম তেমনি চলমান থাকে। আমরা প্রত্যাশা করব, সরকার দ্রুত সংস্কার কমিশন থেকে রিপোর্ট নিয়ে জনগণের সামনে তুলে ধরবেন এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সব সংস্কার কিন্তু জনগণের দ্বারা স্বীকৃত হতে হবে এবং জনগণের সেটা মেনে নিতে হবে। জনগণের মতামত ছাড়া কোনো সংস্কার দীর্ঘস্থায়ী হবে না। ওপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে কোনো কিছু সফল হয় না।’
এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে আলোচনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপার চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান প্রমুখ।