জাতীয়লিড নিউজসারাদেশ

মাংস কেনার সাধ্য নেই, গিলা-কলিজাতেই তুষ্টি!

13views

মোঃ আরিফুর রহমান: রাজধানীর একটি বস্তিতে থাকেন রিকশা চালক কামাল হোসেন স্বাদ থাকলেও বাড়তি দামে মাংস কেনার সাধ্য নেই তার। তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে কিনেছেন মুরগির গিলা-কলিজা। তবে দাম চড়া সেটিরও। বাজারে ঊর্ধ্বমুখী ব্রয়লারসহ সব ধরনের মুরগির দাম। নতুন করে না বাড়লেও আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির মাংস, যা রীতিমতো হিমশিম খাওয়াচ্ছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের। সেখানে মাংস কেনা যেন অনেকটাই বিলাসিতা নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য। শনিবার (১২ অক্টোবর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার ধারে বিক্রি হওয়া মুরগির গিলা, কলিজা ও চামড়া কিনছেন অনেকে।

মুরগির গিলা, কলিজা, চামড়া ও পা একসঙ্গে নিলে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা। লাগামহীন এই বাজারে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের পাশাপাশি অনেকেই ঝুঁকছেন গিলা-কলিজার দিকে। ভোক্তাদের দাবি, অস্থির নিত্যপণ্যের বাজারে মাংসের স্বাদ মেটাতে হচ্ছে মুরগির গিলা-কলিজাতে। রিকশাচালক কামাল হোসেন বলেন, ‘মুরগি কেনার সামর্থ্য নেই। তাই গিলা, কলিজা, আর চামড়া কিনে নিয়ে যাচ্ছি। এগুলো দিয়েই আজ দুপুর ও রাতের খাবার হবে।’ গিলা-কলিজা কিনতে দেখা যায় এ মধ্যবয়স্ক নারীকেও। তিনি কথা বলতে রাজি না হলেও তিনি আমাদেরকে জানান, অন্যের বাসায় কাজ করেন। যা বেতন পান, তা দিয়েই সংসার চলে। মুরগি কিনতে গেলে ২০০-৩০০ টাকা খরচ হবে। এত টাকা দিয়ে মাংস কিনলে অন্য কিছু কেনার পয়সা থাকবে না। তাই মুরগির চামড়া, গিলা-কলিজা নিয়ে যাচ্ছেন।

বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে মুরগির দাম বাড়ায়, ব্যবসায়ীরা বেশি দামে গিলা-কলিজা বিক্রি করছেন। সেটি এনে খুচরায় বিক্রি করা হয়। তাই হাতবদলের কারণে এখানেও দাম বাড়ে। গিলা-কলিজা বিক্রেতা জসিম বলেন, গিলা-কলিজার ক্রেতা মূলত নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। তবে যে হারে মুরগির দাম বাড়ছে, তাতে মধ্যবিত্তরাও এখন এসবের দিকে ঝুঁকছে।

উল্লেখ্য, বাজারে বর্তমানে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৬০-২৭০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৮০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৪০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়। মুরগির দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, সম্প্রতি ফেনীসহ কয়েকটি জেলায় বন্যার কারণে অনেক খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি ফিডের দামও চড়া। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ায় দামও বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, সরকার সব সময় করপোরেটদের সঙ্গে নিয়ে মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণের আলোচনা করেন। অথচ এখানে প্রান্তিক খামারিদেরও মতামত নেয়া দরকার। বহুজাতিক কোম্পানির ফিড ও মুরগির বাচ্চার সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে মুরগির উৎপাদন খরচ কমবে। এতে বাজারে মুরগি ও ডিমের দামও কমে যাবে। প্রান্তিক খামারিরাও ন্যায্যমূল্য পাবেন, ভোক্তারাও ন্যায্যমূল্যে কিনতে পারবেন।

Leave a Reply