শারদীয় দুর্গাপূজা ও সাপ্তাহিক ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে নেমেছে পর্যটকের ঢল। শুক্র ও শনিবার (১১ ও ১২ অক্টোবর) এই দুই দিন সবগুলো হোটেলে শতভাগ বুকিং রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটকদের যাতায়াত নিরুৎসাহিত করায় কক্সবাজারে ভিড় বেড়েছে ভ্রমণপিপাসু মানুষের। তাদের নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
দুর্গাপূজার সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি মিলে চার দিনের লম্বা ছুটি। আর এই ছুটির সময়টা পরিবার নিয়ে পর্যটকরা ছুটে আসছেন কক্সবাজারে। সমুদ্র সৈকত ছাড়াও হিমছড়ি, ইনানী, দরিয়া নগর পাটুয়ার টেকসহ সবগুলো পর্যটন স্পটে ব্যাপক সমাগম। পর্যটকদের পদচারনায় মুখর এখন এসব এলাকা।
শুক্রবার বিকালে কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে কথা হয় ঢাকার মোহাম্মদপুর থেকে আসা পর্যটক শাহরিয়ার, রুমেল ও রুমোর সঙ্গে। তারা বলেন, টানা ছুটি পেয়ে ২০ বন্ধু মিলে পরিবার নিয়ে এসেছেন কক্সবাজারে। গরমের এই সময়ে সাগরের পানিতে তাদের ক্লান্তি দূর হয়ে যাচ্ছে।
দিনাজপুর থেকে আসা পর্যটক নাহিদা, সুমি ও ফয়সাল জানান, দেশের চলমান পরিস্থিতির মাঝেও ছুটি পেয়ে কক্সবাজার বেড়াতে আসছেন অনেকদিন পর। কাজের চাপসহ সব ক্লান্তি ভুলে এখানে সময় পার করছেন তারা।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এস এম কিবরিয়া বলেন, আমাদের মাধ্যমে অনেকেই এসেছেন কক্সবাজারে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ভ্রমণ বাতিল করে অনেক পর্যটক এখন কক্সবাজারে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পর্যটকদের ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করার কারণে কক্সবাজারে বেড়ে গেছে পর্যটকের আগমন। তবে সেন্টমার্টিন যেতে পারলে আমাদের বুকিং আরও বেড়ে যেত।
কক্সবাজার কলাতলী মেরিন ড্রাইভ রোড হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি মৌখিম খান বলেন, শুক্র ও শনিবার সবগুলো হোটেলের শতভাগ বুকিং হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ও আগামী রবিবারের বুকিং কিছুটা কম। তবে সবমিলিয়ে ভালো ব্যবসা হবে এবার।
কক্সবাজারে সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে। এর মধ্যে স্টার মানের হোটেল রয়েছে অর্ধশত। এসব স্টার মানের হোটেলে শতভাগ বুকিং রয়েছে বলে হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী জানান।
কক্সবাজার রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, আমাদের প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক রেস্টুরেন্ট রয়েছে। অনেকদিন পর সবগুলো রেস্টুরেন্ট খুলে ব্যবসা করছে। মন্দার কারণে আমাদের অনেক রেস্টুরেন্ট এতদিন বন্ধ ছিল। আশা করি, এখন থেকে ব্যবসা ভালো হবে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, আমাদের ব্যবসা এখন থেকে আল্লাহর রহমতে ভালো হবে। এবারের ছুটিতে ভালো বুকিং পেয়েছি আমরা সবাই। আশা করি, অতীতের লস কেটে উঠতে পারবো।
তারকা হোটেল ওসান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের। নিয়মিত ব্যবসা না থাকলে ঋণের ওপর প্রতিষ্ঠান চালানো হাতি পোষার মতো। ২০১২ সাল থেকে কোনও না কোনও কারণে ভরা মৌসুমেও পর্যটকশূন্য সময় কাটাতে হচ্ছে। তবে ভ্রমণপিয়াসীদের সেবা দিতে আমরা সবসময় প্রস্তুত থাকি। এবার চার দিনের ছুটিতে আমরা ৯৫ শতাংশ বুকিং পেয়েছি। এরপর ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত বুকিং রয়েছে ৮০-৮৫ ভাগ রুম। মৃতপ্রায় পর্যটনে সতেজতা ফেরাতে আমরা অধিকাংশ ৪০-৪৫ শতাংশ এবং ক্ষেত্র বিশেষে ৫০ শতাংশ ছাড়ও দিয়েছি। পর্যটকদের ভোজনে ভিন্ন স্বাদ দিতে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ উৎসবের আয়োজন রয়েছে। যদিও এর যাত্রা ছিল তিন দিনের। কিন্তু ভোজনরসিকদের জন্য ২০ অক্টোবর পর্যন্ত করা হয়েছে। যে কেউ চাইলে স্বল্পমূল্যে আট ক্যাটাগরির ইলিশ রান্নার স্বাদ নিতে পারেন।
কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছে টুরিস্ট পুলিশ। টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রেজিয়নের পুলিশ সুপার আল আসাদ মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে আমাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন। আমরা আইটির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিতের কাজ করছি। টহলগুলো অব্যাহত থাকবে সবসময়।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পূজার টানা ছুটিতে কক্সবাজারের বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম হওয়ায়, জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেল থেকে বিশেষ মনিটরিং ব্যবস্থা শুরু হয়েছে। কোনও পর্যটক যাতে হয়রানি শিকার না হয়- বিষয়টি তদারকির জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।